Skip to main content

আহ! কী শান্তি! ভাবতে কি যে ভালো লাগছে! ভাবতে ভালো লাগছে এ জন্যে, আমি একজন বিশ্বাসী। বিশ্বাসের জন্ম হয় আস্থা থেকে। আর আস্থা তৈরি হয় দীর্ঘ সময়ের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে।
আমরা তাকে বিশ্বাস করি, যার উপর আমি ভরসা করতে পারি। আমি তাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য হই। তাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর উপায় থাকে না। আমি তখন আর কোন যুক্তি প্রমান তালাশ করতে যাই না। আমার আস্থা যুগের পর যুগ অটুট থাকে। আমার বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে।

অবিশ্বাসের জন্ম সন্দেহ থেকে। সন্দেহ তৈরি করে আস্থার সংকট। সন্দেহ জন্ম দেয় মানসিক অস্থিরতার। এই অস্থিরতা জন্ম দেয় অবিশ্বাসের। কিন্তু সন্দেহ আর মানসিক অস্থিরতার এই টানাপোড়ন থেকে আর কখনও মুক্তি মিলে না।

আমার মা। আমি নিশ্চিত জানি তিনিই আমার মা। আমার মাকে আমি আমার বাবা ছাড়া আর কোন পরপুরুষের সাথে হেসে কথা বলতে দেখি নি। দেখি নি অন্য কারও সাথে ঘনিষ্ট হয়ে বসতে। বাবার অনুপস্থিতিতে অন্য কোন পুরুষের সাথে আড্ডা দিতে। যখন জানতাম না মানুষের জন্ম রহস্য, তখন থেকেই যা জেনে আসছি, এখনও তাই বিশ্বাস করি। আমার এই বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি হয় না। তাই জন্মের রহস্যগুলো যখন থেকে বুঝে আসতে শুরু করে, তখনও এক পরম আস্থার কারনে কোন সন্দেহ দানা বাঁধার সুযোগ পায় না। তাই আমার আর প্রমান খুঁজে বেড়াতে হয় না। তাই ডিএনএ টেস্ট সম্পর্কে জানি। কিন্তু আমার কখনও নিজের ডিএনএ যাচাই করে দেখার কথা মনে হয় না। কারণ এই যে আমার বিশ্বাস এ তো এক পরম আস্থা থেকে জন্মলাভ করেছে। যাকে আর কোন পরিস্থিতি কখনও বদলাতে পারবে না।

এর বিপরীতে কেউ একজন ছোটবেলা থেকেই দেখে তাদের ঘরে পরপুরুষের আনাগোনা। সে প্রায়ই দেখে, যখন বাবা থাকে না, দু’তিনজন আন্কেল গভীর রাত পর্যন্ত তাদের বাসায় আড্ডা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে সে ঘুমিয়ে যায়। তার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে সে এটিও জানে, যে রাতে বাবা থাকেন, সে রাতে আঙ্কেলগন আসেন না। জন্মরহস্য বুঝার যে বয়স, তার আগে থেকেই তো সে জানে কে তার মা, কে তার বাবা। কিন্তু তার বাবা মায়ের মধ্যকার দূরত্ব, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে ঝগড়া, তার মায়ের অাঙ্কেলদের সাথে মাখামাখি তার কচি অন্তরেও এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করে।

এরপর যখন সে জন্মরহস্য বুঝতে পারার বয়সে উপনীত হয়, আর তার বাবার অনুপস্থিতিতে আঙ্কেলদের আনাগোনা আগের মতোই চলতে থাকে, আর এ সব মূহুর্তে তার উপস্থিতি তার মায়ের কাছে অপছন্দনীয় হওয়ার আভাস সে টের পায়, তার মধ্যে তৈরি হতে থাকে আস্থার সংকট। সন্দেহ তার অন্তরে দানা বাঁধতে থাকে। সে তখন ইচ্ছে করলেও আর তার মায়ের উপর আস্থা রাখতে পারে না। বিভিন্ন কানাঘুষা তার সন্দেহকে আরও উসকে দেয়। সে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝে ঘুরপাক খায়। কখনও কখনও সে এটিও ভাবে, নিজের ডিএনএ একবার পরখ করে দেখবে কিনা। এভাবেই ধীরে ধীরে সে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে। তার না থাকে শান্তি, না থাকে স্বস্তি।

আলহামদুলিল্লাহ, আমার ভাবতে খুশীই লাগছে আমি বিশ্বাসী। সন্দেহ ও অবিশ্বাসের আযাব থেকে আমার রব আমাকে মুক্তি দিয়েছেন। তাই আমাকে কোন প্রমান তালাশ করতে হয় না। কারণ আমার এই বিশ্বাস গভীর এক আস্থার ফসল।

ইসলাম এমন এক ঈমানের কথা বলে, যা গভীর আস্থা থেকে তৈরি হয়। এই আস্থা পরম সত্যবাদী এক নবীর উপর। নবীগনকে আল্লাহ তায়ালা এভাবেই তৈরি করেন। নবীর নবুওয়ত-পূর্ব জীবন বার বার এ কথা বলতে থাকে, ইনি মিথ্যা বলতে পারেন না। তাই আবু বকরেরা এক বাক্যেই ঈমান নিয়ে আসেন। এবং এই সত্যবাদী নবীর সাথে চলতে চলতে এই আস্থা বাড়তে থাকে। তাঁরা এই নবীকে দেখতে থাকেন সহজ ও কঠিন সর্ব অবস্থায়। দেখেন বিপদে-আপদে, যুদ্ধের মূহুর্তে।  সবসময় তাঁকে একই রকম পান। ফলে আস্থায় কখনও চিড় ধরে না। বরং দিনে দিনে তা বাড়তে থাকে।

তাবেয়ীগন সাহাবাদের দেখেন। তাদের মুখে শুনেন এক সত্য নবীর গল্প। আর তাদের জীবনেও পেতে থাকেন সত্য নবীর অটুট অনুসরণ। যে সততার গল্প তারা শুনান, সে সততা দেখতে পাওয়া যায় তাদের জীবনে, পরিপূর্ণ মাত্রায়। ফলে সাহাবাদের সততা দেখে তাঁরা নবীর সততাকে আন্দাজ করেন। আর যুগে যুগে এভাবেই চলতে থাকে। সততার এই চেইনে যারা আসেন, তাই তাদের অন্তরে কখনও সন্দেহ দানা বাঁধে না। তারা যে যুগ যুগ ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সত্যকে বার বার পর্যবেক্ষণ  করেন। যুগ যুগ ধরে চলমান এই পর্যবেক্ষণ যে কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত। তাই তাদের কোন রেট্রোস্পেকটিভ পর্যবেক্ষণের দ্বারস্থ হতে হয় না। তাদের এই প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণকে তাই বিবর্তন বা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মতো কিছু রেট্রোস্পেকটিভ পর্যবেক্ষণ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে না। এই রেট্রোস্পেকটিভ পর্যবেক্ষণ দ্বারা কেবল তারাই প্রতারিত হয়, যারা সন্দেহের বাতিকগ্রস্ত, যাদের নিজেদের উপরও এক ফোঁটা আস্থা নেই। এরা বড় অস্থির। নিজেও অস্থিরতার আযাবে দংশিত হতে থাকে,অন্য আরও অনেককে টেনে আনে অস্থিরতার এই আযাবে।

এই আযাব কেবল দ্বিগুন তিনগুন হয়ে বাড়তে থাকে। এ থেকে সহজে এদের নিস্তার নেই।

 

সন্দেহ থেকেই সুত্রপাত হয় অবিশ্বাসের। আর সন্দেহ তখন অন্তরে দানা বাঁধে, যখন নিশ্চিত জ্ঞান সামনে থাকে না। নিশ্চিত জ্ঞান এমন এক বিশ্বাস তৈরি করে, যা কখনোই অন্ধ নয়। ইসলাম কোন অন্ধবিশ্বাসের দিকে ডাকে না। ঈমান বিল গায়েব বলতে কোন অন্ধবিশ্বাসকে বুঝায় না, বরং ইলমে ওহীর দ্বারা অন্তর আলোকিত হওয়ার মাধ্যমেই ঈমান তৈরি হয়। সূর্যপূজা, অগ্নিপূজা, মূর্তিপূজা ইত্যাদি যে গুলোর পক্ষে কোন নিশ্চিত জ্ঞান নেই, সে গুলোর ভিত্তি অন্ধবিশ্বাসের উপর হতে পারে,  কিন্তু যে অন্তর ইলমে ওহীর আলোতে আলোকিত সে অন্তরে তৈরি হয় এক উপলদ্ধির, যা কোনভাবেই টলে না। এরই নাম ঈমান বিল গায়ব।

আসমানী ইলম এবং সাথে একজন নবীর উপস্থিতি সবার অন্তরে হককে স্পষ্ট করে তোলে। কেউ হয়তো তার দুনিয়াবী কোন স্বার্থ, কিংবা অহংকারের কারনে হককে কবুল করে না, কিন্তু তার অন্তরেও স্পষ্ট হয়ে যায় ইনি নবী।

আল্লাহর রাসুল যখন দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন, কেউ তাকে কবি, কেউ যাদুকর, কেউ গনক বললো ; কিন্তু ধীরে ধীরে সবাই উপলদ্ধি করলো ইনি মোটেই যাদুকর, কবি বা গনক নন।

নবীর মূজিযা, আখলাক, ধীরে ধীরে সর্বত্র তাঁর প্রাধান্যলাভ করা সবাইকে বুঝিয়ে দেয় তাঁর দাবি মোটেই মিথ্যে নয়।

Share: